Thursday, February 26, 2015

লেখকদের খুন করা যায় না


                                                                       
সেটা ২০০৩ সালের নভেম্বর মাস। নতুন চাকরিসূত্রে ক্যালিফোর্নিয়ায়। তখন স্যোশাল মিডিয়া ব্লগ এসব কিছু শুরু হয় নি। স্যোশাল মিডিয়া মানে ইহাহু গ্রুপ। সেই গ্রুপের একটা পোষ্ট কিভাবে যেন চোখে এল। ভীর বলে এক হিন্দু মৌলবাদি প্রমান করার চেষ্টা করছে,  এটমের ধারনা বেদে আছে। বিরুদ্ধে অভিজিত রায় নামে একজন লিখে যাচ্ছে। সব ইংরেজিতে। ইহাহু গ্রুপটার নাম মুক্তমনা । আমি যথারীতি অভিজেতের সাপোর্টে লিখলাম। সেই সূত্রে আমাদের প্রথম পরিচয়। ও জানাল ওর একটা ওয়েব সাইট ও আছে। সেটার নাম মুক্তমনা । ওখানে সবাই ইসলামের বিরুদ্ধে লেখে। কিন্ত হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে লেখার লোক পাওয়া যায় না ! ও মাঝে সাঝে লেখে! যদি আমি ওর সাইটে হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে লিখি!!

  আমি যে লেখক সেটাই জানতাম না ! তারপরে ১৫ বছর একলাইন বাংলা লিখি নি।  আমি অভিজিতকে বল্লাম ভাই এই ত অবস্থা ! ও তখন আমাকে বর্নসফট বলে বাংলায় লেখার একটা সফটোয়ার দেখাল  । বললো, প্রবাসে থেকে যারা লেখে সবার বাংলার অবস্থায় খারাপ। আর এই সব নতুন লেখকদের জন্যই মুক্তমনা !

  তখন ও মুক্তমনা ব্লগ সাইট না । পিডিএফ করতে হত। অভিজিতকে পাঠালে, ও ছাপাত টাইটেল দিয়ে। নিজেই ওয়েব সাইট মেইন্টেইন করত। ও তখন সিঙ্গাপুরে বায়োমেকানিকে পি এই চ ডি ছাত্র। আমার সব পি ডি এফের প্রথম প্যট্রন ও।  শুধু আমি না -আমার মতন অনেক হেজি পেজি লেখকদের মুক্তমনাতে নিয়ে এসে ক্রমাগত উৎসাহ দিয়ে লেখক হিসাবে ওই দাঁড় করিয়েছে।

  তখন মুক্তমনা শুধু বাংলাদেশীদের জন্য ছিল না । ভারতের অনেক অবাঙালী নাস্তিক ওই ইহাহু গ্রুপে ছিল। ধর্ম নিয়ে মারামারি বেশী হত। রাজনীতি কম।

    তখন ও অভিজিত আর বন্যার বিয়ে হয় নি। র‍্যোমান্স চলছে। ওরা সদ্য প্যারিসে মিট করেছে।  ওদের ওই রোম্যান্স পর্বের অনেক সুঃখ দুঃখ ভালো সময়ের ভাগীদার আমি।  আজ সেই সুঃখ স্মৃতি গুলোই শুধু মনে পড়ছে যখন আমরা বেশ গটাপ কেস করে মুক্তমনা সাইটে বিতর্ক জমাতাম। আর কিছু ভাবতে পারছি না । অভিজিতের একটা দীর্ঘ ইন্টারভিঊ নিয়ে ছিলাম ঃ



মৃত্যু নিয়ে ওর সাথে আমার অনেক আলোচনা হয়েছে সেই ২০০৪ সাল থেকেই।  এতদিন এত কথা, এত ইমেল হওয়া সত্ত্বেও নানান কারনে ওর সাথে দেখা হয়েও হচ্ছিল না । সেটাও হল গত নভেম্বর মাসে। ওরা আমাদের বাড়িতে এসেছিল।  বাংলাদেশ যে আর নিরপদ না সেটা নিয়েই আলোচনা হল অনেক।

 এরপরেও যে কেন ওরা বাংলাদেশে গিয়েছিল, আমার জানা নেই । জানলাম যখন ও প্লেনে উঠছে আই এডি থেকে। আমি ওদের মেয়ে তৃষার লোকাল গার্জেন। বন্যা প্লেনে ওঠার কিছুক্ষন আগে জানাল, বিপ্লব আমরা বাংলাদেশে যাচ্ছি, তৃষার কিছু হলে দেখ!! আমি তখন আর কি বলব? ফেসবুকে চ্যাটে খোজ নিত। জানলাম বাংলাদেশে নেমেই ওদের ফুড পয়জন হয়েছে।

 তৃষাকে কিছুক্ষন আগে হোস্টেল থেকে তুলে প্লেনে তুলে দিলাম। বন্যার মা এবং বাকী দুই বোন আমেরিকাতেই থাকে। ও নানীর কাছে গেল। তৃষা বেশ শক্ত আছে।  মায়ের মতন মানসিক দিক দিয়ে খুব শক্ত ওদের মেয়ে।

 তৃষা জানতে চাইল, কেন মেরে ফেলা হল ওর বাবাকে। আমি জানিয়ছি, লেখকেরা মরে না । অভিজিত যা লিখে গেছে, তাতে রক্তবীজের মতন সহস্র ব্লগারদের   কলমে ও বেঁচে থাকবে। মানুষের দেহকে খুন করা যায়, চেতনা কে না । ২০০৩ সালে আমরা যখন লিখতাম, মোটে ৫-৬ ব্লগার ছিল মুক্তমনা সাইটে। আজ শয়ে শয়ে, হাজারে হাজারে বাংলাদেশী যুবকেরা ব্লগে লিখছে। তাদের গুরু একজনই -অভিজিত রায়।

 অভিজিত রায়রা মরে না । যারা ভাবে রক্তপাত করে অভিজিত রায়কে আটকানো যাবে তারা ভুল পথে। হাজার অভিজিত রায় এখন রেডি। আমি প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিলাম। তারপরে মনে হল, ভয় পেলে ওরা জিতে গেল। আমরা হেরে গেলাম। এটা লড়াই।  চেতনা মুক্তির, বিজ্ঞান চেতনার লড়াই। অভিজিত রায় কমিনিউস্ট, হিন্দুইস্ট, ইসলামিস্ট, রাবিন্দ্রিক কাওকেই ছাড়ে নি।  এ লড়াই বন্দুক, ছুড়ি দিয়ে জিততে পারবে না কোন প্রতিপক্ষ।


No comments: